গ্রীষ্মের দুপুরে শহরের রাস্তার বাঁকে বাঁকে চোখে পড়ে তাল শাঁসের অস্থায়ী দোকান। তাল থেকে শাঁস কেটে বিক্রি করা হয় এসব ভ্রাম্যমাণ দোকানে। প্রচণ্ড গরমে তালশাঁস আপনাকে খানিকটা স্বস্তি দিতে পারে। এ কারণে অনেকেই তালশাঁস কিনে খান। এতে যেমন রসনা মেটে তেমনি শরীরে পানির অভাবও পূরণ হয়। এতে রয়েছে নানাবিধ গুণ।

তাল শাঁসের গুণ নিয়ে কথা হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টিবিদ জাহানারা আক্তার সুমির সঙ্গে। ‘পুষ্টিগুণের দিক থেকে তাল শাঁসের জুড়ি নেই’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘রসালো এই ফল খেতে মিস্টি, তাই এর ক্যালরির পরিমাণও বেশি। ক্যালোরির বেশির ভাগই আমরা পাই শর্করা, আমিষ ও বিভিন্ন রকম শরীরের অতিপ্রয়োজনীয় ভিটামিনস ও মিনারেলস থেকে। তালের শাঁসে জলীয় অংশ অনেক বেশি থাকায় গরমে শরীরের পানির চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম হয় যা শরীর সতেজ রাখে এবং ক্লান্তি দূর করতে পারে।’

এই পুষ্টিবিদ আরও বলেন, ‘তালশাঁসে প্রচুর ক্যালসিয়াম রয়েছে যা হাড়ের ক্ষয় রোধ করতে সাহায্য করে এবং হাড় মজবুত রাখে। এ ছাড়াও ভিটামিন এ, ভিটামিন বি, ভিটামিন সি, খনিজ লবণের মধ্যে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন রয়েছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে।’

তিনি আরও বলেন, ‘১০০ গ্রাম তালের শাঁস-এ ক্যালরি পাই আমরা ৮৭ ক্যালরি। জলীয় অংশ প্রায় ৮৮ গ্রাম, আমিষ ৭-৮ গ্রাম, শর্করা ১০-১১ গ্রাম, ফ্যাট ১ গ্রাম ও খাদ্য আশ রয়েছে ১ গ্রামের মতো।’

কিছু উপকারিতা

১. তালের শাঁসে প্রচুর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে যা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

২. তালের শাঁসে রয়েছে ক্যালসিয়াম যা আমাদের দাঁত ও দাঁতের সুরক্ষায় কাজ করে এবং দাঁতের ক্ষয়রোধ করে।

৩. পুষ্টিকর এই ফলে আছে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন ও ফসফরাস যা হাড়কে শক্ত ও মজবুত করে।

৪. কচি তালের শাঁস রক্তস্বল্পতা দূর করতে সাহায্য করে।

৫. তালের শাঁসে পানির পরিমাণ বেশি থাকায় এটি আমাদের শরীর থেকে ডিহাইড্রেশন বা পানিশূন্যতা দূর করতে সাহায্য করে।

৬. তালের শাঁস খেলে আমাদের শরীরে নাইট্রেটের পরিমাণ বেড়ে যায়। যা প্রাকৃতিক উপায়ে আমাদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ ও স্বাভাবিক রাখে।

৭. তালের শাঁস লিভারজনিত বিভিন্ন সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।

৮. তালের শাঁসে আছে ভিটামিন বি ও সি যা বমি ভাব দূর করে ও আমাদের খাওয়ার রুচি বাড়াতে সাহায্য করে।

৯. তালের শাঁসে আছে আয়রন যা মেয়েদের ক্ষেত্রে খুবই উপকারী। অ্যানেমিয়া রোগীদের জন্য খুবই উপকারী।

১০. এতে আছে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, ফসফরাস, আয়রন, সেলেনিয়ামসহ অন্যান্য খনিজ উপাদান যা আমাদের চোখের জন্য খুবই উপকারী।

১১. এর মধ্যে এমন কিছু উপাদান আছে যা ক্যান্সার প্রতিরোধে সক্ষম।

১২. তাছাড়া তালের শাঁস স্মৃতিশক্তি বাড়াতে ও ক্লান্তি দূর করতে সহায়ক।

১৩. প্রেগন্যান্ট মহিলাদের এই তালের শাঁস খেতে পরামর্শ দেয়া হয় কারণ এটি হজমশক্তি বৃদ্ধি করে।